• Housing Estate, Goalchamot, Faridpur, Bangladesh
  • +880 171-0880987

শিশু সুরক্ষা নীতিমালা

এসো জাতি গড়ি (এজাগ) এর সকল কার্যক্রম, কৌশল ও পরিকল্পনায় শিশুদের নিরপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একটি শিশু সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এজাগের সকল কার্যক্রমে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তারই সার্বিক কৌশল সম্বলিত হয়েছে এই নীতিমালায়। এই নীতিমালার মাধ্যমে এজাগেরকর্মকর্তা, কর্মী, নির্বাহী বোর্ড সদস্য এবং এজাগসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান শিশুদের কল্যানে কিভাবে আচরণ করবে তার একটি গাইডলাইন তুলে ধরা হয়েছে। এই নীতিমালার মাধ্যমে এজাগ শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে ুবৎড় ঃড়ষধৎবহপব ঘোষণা করছে। এজাগেরযে কোন ধরনের কার্যক্রমে শিশু নির্যাতনের ঝুঁকি কিভাবে হ্রাস করা যায় তার একটি আদর্শিক কাঠামো এই নীতিমালায় পরিবেশিত হয়েছে। এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালা শিশুদের সুরক্ষা এবং সকল প্রকার নির্যাতন ও শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে- এজাগেরএই মৌলিক বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করেছে।

এসো জাতি গড়ি (এজাগ) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের শিশুদের মৌলিক অধিকারসহ বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে সদস্য সংগঠনের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং, সমন্বয়, লবিং, সচেতনতা ও এডভোকেসি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছরে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এবং এর সদস্য সংস্থাসমূহ সকল স্তরে শিশুদের অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে প্রতিশ্রুতবদ্ধ। সাধারণ জনগোষ্ঠির মাঝে শিশুদের অধিকার বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত শিশুদের অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা ছাড়াও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের তাদের করণীয় সম্পর্কে আরো সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের অন্যতম কাজ। শিশুর প্রতি অবিচার ও বিভিন্ন প্রকার শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধের জন্য সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম জাতীয় পর্যায়ে ব্যপক প্রচারণার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি অধিকার বঞ্চিত শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজসহ সরকারের সাথে শিশু বিষয়ে বিভিন্ন এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সরকারের শিশু বিষয়ক বিভিন্ন কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ফোরাম শিশু বিষয়ক বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের মোট সদস্য সংগঠন হচ্ছে।

এসো জাতি গড়ি (এজাগ) এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এসো জাতি গড়ি (এজাগ) এর লক্ষ্য হলে বাংলাদেশে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিশুদের বসবাসপযোগী সমাজ প্রতিষ্ঠা।

এজাগেরকার্যক্রমের উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-

  • জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন
  • শিশু অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনা সৃষ্টি
  • শিশুর সুরক্ষায় আইনগত কাঠামো তৈরি ও শক্তিশালীকরণে সহায়তা
  • শিশুর মৌলিক অধিকার ভোগে সহায়তা
  • শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, শিশু পাচার ও এইচআইভি/এইডস থেকে রক্ষা
  • শিশু নীতি বাস্তবায়ন

এজাগ তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে সেগুলো হলো

  • জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নে সরকারের সাথে এডভোকেসি এবং লবিং
  • শিশু অধিকার সম্পর্কে তথ্যের প্রকাশ ও প্রচার
  • শিশু অধিকার সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম
  • মিডিয়া এডভোকেসি
  • শিশু অধিকার সম্পর্কে জনমত তৈরিতে সহায়তা
  • সরকারী, বেসরকারী, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ তৈরি ও তথ্য বিনিময়
  • সদস্য সংগঠনের সাথে সমন্বয়
  • শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন উপায় উদ্ভাবন
  • সদস্য সংগঠনকে কারিগরি সহায়তা ও অন্যান্য সহাযোগিতা প্রদান

যৌক্তিকতা:

এটা অনস্বীকার্য যে, পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও নাগরিকদের বেশিরভাগ মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। এ প্রেক্ষিতে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও ঝুঁকির মুখে পতিত যেহেতু তাদের পিতা-মাতা তাদেরকে নিরাপদ আবাস, সঙ্গ, শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনা। এই শিশুরা বিশেষ করে দরিদ্র শেণীর শিশুরা মানসিক নির্যাতন থেকে শুরু করে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এমনকি আপাতদৃষ্টিতে সুবিধাভোগী শিশু হিসেবে বিবেচিত স্বচ্ছল পরিবারের শিশুরাও বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। পরিবার, বিদ্যালয়, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আশ্রয় স্থান, দাপ্তরিক কার্যালয় থেকে সর্বক্ষেত্রে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের নির্যাতন চলে আসলেও সাম্প্রতিককালে শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি ব্যপকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। শিশু অধিকার বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ইস্যুটি খুবই সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ। এরই প্রেক্ষিতে এজাগের সকল কার্যক্রমে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই শিশু সুরক্ষা নীতিমালা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে।

শিশু সুরক্ষা নীতিমালা সম্পর্কে এজাগের অবস্থান:

এসো জাতি গড়ি (এজাগ) শিশুদের প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন ও শোষনকে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, নীতিমালা, কৌশল যাতে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ এবং তাদের সুরক্ষার সবসময় সঙ্গতিপূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে এজাগ বিশ্বাস করে যে, এজাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মীবৃন্দ, সদস্যসংঠনের প্রতিনিধি, অথবা এজাগের কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আচরণ অবশ্যই এই নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক নয়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক দায়িত্ব রয়েছে। এজাগ ব্যক্তি ও সাংগঠানিক পর্যায়ে এই নীতিমালার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিশু অধিকার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজাগও এর সদস্যসংগঠনগুলো এই নীতিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এবং এজাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ যাতে নীতিমালার আচরণবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করবে। নীতিমালার বিভিন্ন অধ্যায়ে বর্ণিত শিশু সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা, নিয়োগ ও নির্বাচন প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ এবং অভিযোগের প্রতি সাড়া দান ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কার্যক্রম সম্পাদনে এজাগ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে।

শিশু সুরক্ষা নীতিমালা সম্পর্কে এজাগের ঘোষণা:

এই নীতিমালার অনুসরণ এজাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মীবৃন্দ, সদস্য সংগঠন, নির্বাহী বোর্ড সদস্য এবং এজাগের কার্যক্রমে সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সকল সংগঠন, সরবরাহকারী, সেবাদাতা, উপদেষ্টা, স্বেচ্ছাসেবক এবং উপকারভোগীদের জন্য বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়েছে। এই নীতিমালার প্রাথমিক লক্ষ্য হলে শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার স্বার্থে এবং জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের সাথে সংগতি রেখে শিশুদের সকল নির্যাতন, অবহেলা ও শোষণ থেকে মুক্ত করতে এজাগ সকল কৌশল, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে। এজাগের কোন কার্যক্রমের দ্বারা শিশুরা কোন প্রকার নির্যাতনের শিকার হলে তা সহ্য করা হবেনা। সকল শিশুর নিরাপত্তা ভোগ করার সমান অধিকার রয়েছে। এই নীতিমালায় অবশ্য করণীয় আরো যেসব ঘোষণা অন্তর্ভূক্ত হয়েছে তা হলো –

  • যে সব পরিস্থিতি শিশুর জন্য ঝুকিপূর্ণ তা চিহ্নিতকরণ এবং মোকাবেলার উপায় নির্ধারণে এজাগ সচেষ্ট হবে
  • শিশুরা যাতে তাদের প্রতি অপ্রত্যাশিত আচরণ চিহ্নিতকরণে সক্ষম হয়, সে সম্পর্কে তাদের উদ্বিগ্নতা ও শিশু অধিকার সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করতে উৎসাহী হয় সে পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে
  • শিশু নির্যাতন সম্পর্কিত কোন বিষয়ের উদ্রেক হলে নীতিমালা ও সংস্থার যথাযথ বিধি অনুসারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

শিশু সুরক্ষা নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

লক্ষ্য: এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্য হলো – “এজাগের যে কোন কার্যক্রমে শিশুকে সকল ধরনের নির্যাতন হতে সুরক্ষা প্রদান”।
উদ্দেশ্য: এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালার উদ্দেশ্য হলো-
ক. একটি শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে এজাগের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সকল শিশু যে কোন ধরনের নির্যাতন, শোষণ থেকে পূর্ণ সুরক্ষা ভোগ করবে
খ. এজাগের সকল নীতিমালা, কৌশল, পরিকল্পনা শিশু সুরক্ষা নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা
গ. শিশুদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার করতে সহায়তা করা

যাদের জন্য প্রযোজ্য-

  • এজাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মীবৃন্দ
  • সদস্য সংগঠনসমূহ
  • নির্বাহী বোর্ড সদস্য
  • স্বেচ্ছাসেবক
  • চুক্তিবদ্ধ উপদেষ্টা/পরামর্শদাতা
  • গবেষক, মূল্যায়নকারী, হিসাব নিরীক্ষক
  • ঠিকাদার এবং অন্যান্য সেবাপ্রদানকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্টান
  • এজাগের কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান
  • পরিদর্শনকারী, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী
  • ইন্টারনি

সংজ্ঞা ও অনুসৃত মূলনীতি

শিশু নির্যাতন এবং এর বিভিন্ন ধরন এর সংজ্ঞা
ক. শিশুর সংজ্ঞা: জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের নীচে সকল মানব সন্তান শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে।
খ. শিশু নির্যাতন: শিশু নির্যাতন হচ্ছে সেইসব প্রক্রিয়া বা কাজ বা কাজের চেষ্টা ও দায়িত্বহীনতা যা প্রত্যক্ষ অথবা/এবং পরোক্ষভাবে শিশুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা তার নিরাপদ ও সুষ্ঠু বিকাশের সম্ভাবনাকে ব্যহত করে।
গ. শারীরিক নির্যাতন: শারীরিক নির্যাতন হচ্ছে শিশুর ওপর প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষ শারীরিক আঘাত যেমন শিশুকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে দৈহিক আক্রমন, কোন বস্তু দ্বারা আঘাত করে জখম করা, শিশু আঘাত পেতে পারে এমন বস্তুর সংস্পর্শ থেকে শিশুকে নিরাপদ না রাখা ইত্যাদি।
ঘ. আবেগ সংক্রান্ত নির্যাতন: আবেগ সংক্রান্ত নির্যাতন হচ্ছে শিশুর কার্যক্রম, পছন্দ, আচরণ বা মতামতের ওপর ধারাবাহিক রুঢ়, নেতিবাচক, তিরস্কারমূলক মন্তব্য বা অন্য শিশুর ওপর বিশেষ পক্ষপাতিত্ব বা প্রাধান্য দেয়া ইত্যাদি। এর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশের ওপর তীব্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় যেমন আবেগীয় নির্যাতনের ফলে শিশু সবসময় হীনমন্যতায় ভোগে এবং উদ্যমী হতে কুন্ঠা বোধ করে।
ঙ. অবহেলা: শিশুর উন্নয়নে শিশুর পরিবার বা তত্ত্বাবধানকারীর প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবেগীয়, পুষ্টিগত, আশ্রয়, নিরাপত্তা, বাসস্থান ইত্যাদি মেটাতে ব্যর্থতা হলো শিশুর প্রতি অবহেলা। এটি শিশুর স্বাস্থ্য বা শারীরিক, মানসিক, মনোজাগতিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার মাত্রা বৃদ্ধি করে।
চ. যৌন নির্যাতন: যৌন নির্যাতন হচ্ছে যৌনক্রিয়ায় শিশুকে যুক্ত করা যা অনুধাবন করতে শিশু সক্ষম নয়, এতে অংশগ্রহণ বা সম্মতি প্রদানের জন্য শারিরীক বা মানসিকভাবে প্রস্তুত নয় এবং যা আইন বা সামাজিক বিধি নিষেধের লঙ্ঘন। যৌন উদ্দেশ্যে শিশুর শরীর স্পর্শ, পর্ণোগ্রাফী, অশ্লীল বাক্য, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদিও যৌণ নির্যাতনের অন্তর্ভূক্ত।
ছ. শোষণ: ব্যক্তি স্বার্থ অর্জনের জন্য বাণিজ্যিক বা অন্যভাবে কর্মক্ষেত্রে বা অন্যান্য কার্যক্রমে শিশুকে শোষণ করা হয়। শিশু শ্রম এবং শিশু পতিতাবৃত্তি এর উদাহরন হিসেবে দেখানো যেতে পারে। এই ধরনের নির্যাতন শিশুর শারীরিক, মানসিক, শিক্ষা বা মনোজাগতিক, নৈতিক বা সামাজিক-আবেগীয় উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অনুসৃত মূলনীতিসমূহ

এজাগ প্রণীত শিশু সুরক্ষা নীতিমালায় জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের নিম্নোক্ত মূলনীতি ও ধারাসমূহকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে –
ক. বৈষম্যহীনতা: জাতি, ধর্ম, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল শিশুর নির্যাতন এবং শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সমান অধিকার রয়েছে। শিশুকে তার প্রাপ্য অধিকার অর্জনে উৎসাহ দেয়া এবং এক্ষেত্রে যে কোন ধরনের অসমতা সৃষ্টি প্রতিহত করা উচিৎ।
খ. শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ: আমাদের সকল কার্যক্রমে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে
গ. অংশগ্রহণ: প্রাসঙ্গিক হলে আমাদের সকল কার্যক্রমে এবং একই সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও শিশুর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
ঘ. বেঁচে থাকা ও বিকাশ: আমাদের সকল কার্যক্রমে শিশুর বেঁচে থাকা ও বিকাশের বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।

 

নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে মূলনীতি হিসেবে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের যেসকল ধারা অনুসরণ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ

ধারা ২: শিশুর প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ ধারা ২৮: সব শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা
ধারা ৩ ঃ শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের প্রাধান্য ধারা ৩৪: সকল প্রকার যৌণ নির্যাতন থেকে শিশুকে রক্ষা করা
ধারা ৬: জীবনধারণ, জীবনরক্ষা এবং বেড়ে ওঠা ধারা ৩৫: সকল প্রকার অপহরণ ও পাচার থেকে শিশুকে রক্ষা করা
ধারা ১২: মত প্রকাশের অধিকার ধারা ৩৬: অনিষ্টকর সব ধরনের শোষণ থেকে শিশুকে সুরক্ষা করা
ধারা ২৩: প্রতিবন্ধি শিশুর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি ধারা ৩৭: শিশুকে নির্যাতন, মৃতুদন্ড থেকে রক্ষা এবং স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা।

আচরণবিধি

এজাগের কর্মকৌশল, কার্যক্রম, পরিকল্পনায় শিশুদের পূর্ন সুরক্ষার প্রয়াসে প্রণীত শিশু সুরক্ষা নীতিমালায় নিম্নলিখিত আচরণবিধি যুক্ত করা হয়েছে। এজাগেরসাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের জন্য উক্ত আচরণবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা বাধ্যতামূলক ঘোষণ করা হয়েছে।

করনীয় :-

ক. এজাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা
খ. শিশুদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা
গ. শিশু নির্যাতন এবং নির্যাতনের শিকার হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে শিশুদের ও তাদের অভিভাবকদের ধারনা দেয়া
ঘ. শিশুকে গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহনযোগ্য আচরণ চিনতে সক্ষম করে তোলা
ঙ. শিশুকে অন্যের অগ্রহণযোগ্য আচরণের মার্জিত প্রতিবাদ করতে সক্ষম করে তোলা
চ. অনাকাঙ্খিত আচরণকারী শিশুকে মার্জিতভাবে সংশোধিত হতে উৎসাহিত করা
ছ. শিশুরা যাতে নির্ভয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা
জ. সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিশুদের সহায়তা করা এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া
ঝ. এজাগের কার্যালয় শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা এবং কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্বাচন করা
ঞ. শিশুদের জন সরবারাহকৃত উপকরণ স্বাস্থ্যসম্মত এবং ঝুঁকিমুক্ত হওয়া
ট. যে কোন বিষয় উত্থাপন ও আলোচনা করা যায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা
ঠ. এজাগের মূলনীতি, কৌশল, বিধিমালা, কার্যক্রম সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া ইত্যাদিতে শিশু সুরক্ষা নীতিমালার পরিপূর্ণ প্রতিফলন নিশ্চিত করা
ড. ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে শিশুদের সাথে সমতা, সম্মান এবং মর্যাদার সাথে আচরণ করা।
ঢ. শিশুর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান দেখানো
ণ. শিশুদের সাথে প্রকাশ্যে বা খোলামেলা পরিবেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা।
ত. এজাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আচরণ শিশুর জন্য অনুকরণীয় হওয়া।
থ. কাজের প্রয়োজনে শিশুকে সফরে নেয়ার প্রয়োজন হলে অভিভাবকের সম্মতিপত্র নেয়া। এক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে উভয় শিশু থাকলে গাইড হিসেবে পুরুষ ও নারী কর্মীর ব্যবস্থা করা।
দ. শিশুদের সাথে স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা
ট. শিশু কোন নির্যাতনের শিকার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে দ্রুত অবহিত করা
ঠ. শিশু অসচেতনতা বা লোকলজ্জার কারণে নির্যাতনের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করলে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে শিশুকে সহায়তা করা
ড. নেতিবাচক সমালোচনার পরিবর্তে শিশুদের গঠনমূলক ও উৎসাহমূলক কথা বলা
ঢ. শিশুদের নিয়ে কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিশুদের প্রয়োজন ও ক্ষমতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া এবং তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রম পরিহার করতে হবে।
ণ. বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বা গবেষণা বা প্রতিবেদনের প্রয়োজনে শিশুর ছবি ও অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করলে শিশু ও তার আইনগত অভিভাবকের সম্মতি নেয়া।

বর্জনীয় :-

ক) শিশুর বংশ পরিচয়, অভিভাবকের পেশা, আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয়, গোত্রীয় অবস্থানভেদে বৈষম্যমূলক আচরণ
খ) অনাকাঙ্খিত আচরণের জন্য শিশুর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ অথবা ধমকের সুরে নিবৃত্ত করার চেষ্টা বা তিরস্কার করা
গ) ব্যক্তিগত কক্ষে শিশুর সাথে একাকী দীর্ঘ সময় কাটানো
ঘ) শিশুর অপছন্দ সত্ত্বেও গায়ে হাত দিয়ে কথা বলা বা আদর করা
ঙ) শিশুকে বিকৃত নামে ডাকা
চ) শিশুকে দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানো
ছ) শিশুর উপস্থিতিতে অন্যদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার বা গালিগালাজ করা
জ) কৌতুকচ্ছলে শিশুদের সাথে যৌনবিষয়ক কোন মন্তব্য করা
ঝ) শিশুর উপস্থিতিতে পর্ণো ছবি বা ভিডিও দেখা
ঞ) শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রপাতির সংস্পর্শে আনা বা কোন উপকরণের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে শিশুকে অবহিত না করা
ট) শিশুর মনযোগ এড়ানোর জন্য কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রদান করা
ঠ) শিশুকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা অথবা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের কারণ সৃষ্টি করা।
ড) শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন বা এমন আচরণ করা যা শিশুমনে যৌন অনুভূতির জন্ম দেয়।
ঢ) অনেক শিশুর উপস্থিতিতে কোন শিশুকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া
ণ) কাজের প্রয়োজনে সফরকালীন সময়ে একই রুমে রাত কাটানো বা অন্য সময় শিশুকে নিজের রুমে নিয়ে আসা বা শিশুর রুমে যাওয়া
ত) শারিরীকভাবে কস্টকর বা যৌনতা উদ্রেক করে এমন কোন ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করানো
থ) শিশুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন আলোচনা, বিনোদন বা প্রতিযোগিতায় শিশুকে অংশগ্রহণ করানো
দ) শিশু নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটলে এড়িয়ে যাওয়া বা যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া
ধ) শিশুদের সামনে মদ্যপান বা ধুমপান করা।
ন) কর্মী বা শ্রমিক হিসেবে কোন শিশুকে নিযুক্ত করা

শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়ন

এসো জাতি গড়ি (এজাগ) প্রকৃতিগতভাবেই সর্বক্ষেত্রে শিশুদের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। কাজেই এর সকল কার্যক্রমে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি অবশ্যপালনীয়। এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নের কৌশল নিম্নরূপ

কৌশল

ক) যেহেতু এই দলিল শিশুদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সেহেতু সংগঠনের সকল পর্যায়ে এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ বাধ্যতামূলক।
খ) এই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য এজাগ অবশ্যই তার সকল পরিকল্পনা, নীতিমালা, কৌশল ও প্রক্রিয়া, কার্যক্রম, আচরনবিধি, নিয়োগ প্রক্রিয়া এমনকি অবকাঠামো যাতে শিশুবান্ধব হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
গ) এই নীতিমালার সকল অংশ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ, বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
ঘ) এই নীতিমালা এজাগের কার্যক্রমের প্রকৃতি ও ধরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সকল স্তরের স্টাফ, সদস্য সংগঠন, নির্বাহী বোর্ড এবং সম্ভব হলে বাইরের পরামর্শদাতা, স্বেচ্ছাসেবক বা সেবা প্রদানকারীদের মতামত নেয়া যেতে পারে।
ঙ) সংগঠনের অন্যান্য নীতিমালা (ফিনান্সিয়াল পলিসি, প্রকিউরমেন্ট পলিসি, সার্ভিস রুল ইত্যাদি) পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো যদি শিশু সুরক্ষা নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হবে এবং অবশ্যই শিশু সুরক্ষা নীতিমালা কার্যকর করার পূর্বেই সম্পন্ন করতে হবে।
চ) নীতিমালায় বর্ণিত আচরণবিধি এজাগের সকল কার্যক্রম যেমন – কর্মী, পরামর্শদাতা, স্বেচ্ছাসেবক এবং পণ্যদ্রব্য সরবরাহকারী নিয়োগ, প্রকিওরমেন্ট, পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারন, কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ছ) এজাগ শিশু সুরক্ষা নীতিমালা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, নীতিমালার বাস্তবায়ন মনিটরিং, তদন্ত কার্যক্রম, প্রতিবেদন তৈরিতে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে
জ) এজাগের সকল স্টাফ, সদস্য সংগঠন, নির্বাহী বোর্ড, ঠিকাদার, পরামর্শদাতা, সেচ্ছাসেবক এবং অন্যান্য সেবাদাতারা যাতে এই নীতিমালার সকল বিষয় এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঝ) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশু অধিকারের সাথে যুক্ত সংস্থাগুলোর সাথে শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়ন বিষয়ে যোগাযোগ, সমন্বয়, তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া

ক) শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। ৫ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে এজাগের পরিচালক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নির্বাহী বোর্ড সদস্য এবং সদস্য সংগঠন থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
খ) ব্যবস্থাপনা কমিটি শিশু সুরক্ষা নীতিমালার সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য একজন ফোকাল পারসন নির্ধারণ করবেন। এই ফোকাল পারসন হবেন এজাগেরএকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
গ) এজাগ সচিবালয়ের একটি নিদিষ্ট স্থানে হেল্প ডেস্ক^ স্থাপন করা হবে যেখানে শিশু নির্যাতন সম্পর্কে তথ্যপ্রদানসহ অভিযোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া দৃশ্যমান স্থানে এজাগেরশিশু সুরক্ষা নীতিমালা সম্পর্কে তথ্য প্রদর্শন করা হবে।
ঘ) এজাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মীবৃন্দ, নির্বাহী বোর্ড সদস্য, পরামর্শদাতা, স্বেচ্ছাসেবক, ঠিকাদারসহ প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত সকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে শিশু সুরক্ষা নীতিমালা সম্পর্কে সচেতন করা হবে।
ঙ) এজাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মীবৃন্দ, নির্বাহী বোর্ড সদস্য, পরামর্শদাতা, স্বেচ্ছাসেবক, ঠিকাদারসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত সকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান শিশু সুরক্ষা নীতিমালায় বর্ণিত আচরনবিধিতে স্বাক্ষর করবেন।
চ) নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য সকল আর্থিক চাহিদা এবং লজিস্টিক সাপোর্ট এর বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
ছ) এজাগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কার্যক্রমের দ্বারা কোন শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে ঘটনার প্রতিকার এবং শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

কার্যক্রম

এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

সচেতনতা :-

১) শিশুর অধিকার কিভাবে লঙ্ঘন বা শিশু কিভাবে নির্যাতনের শিকার হতে পারে সে বিষয়ে এজাগেরসকল স্টাফ, নির্বাহী বোর্ড সদস্য, সদস্য সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এজন্য প্রশিক্ষণ, ওরিয়েন্টেশন, কর্মশালার আয়োজন এবং বিভিন্ন ক্যাম্পেইন উপকরণ যেমন পোস্টার, লিফলেট ডিসপ্লে বোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা হবে। –
২) এজাগে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মীদের জন্য অথবা শিশু নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে (মনিটরিং রিপোর্ট এর ভিত্তিতে), অথবা নীতিমালায় কোন পরিবর্তন আনয়ন করা হলে বিশেষ ওরিয়েন্টেশন এর আয়োজন করা হবে। সেচ্ছাসেবক, ঠিকাদার, কনসালটেন্টদের সংক্ষিপ্তাকারে ওরিয়েন্টেশন দেয়া যেতে পারে।

প্রতিরোধ :-

১) ব্যক্তিগত ও পেশাদারী আচরণ, সচেতনতা ইত্যাদির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে যে সংস্থায় শিশুদের জন্য ঝুঁকির মাত্রা প্রশমিত হয়েছে
২) কর্মী, সেবপ্রদানকারী, পরামর্শদাতাদের নিয়োগে নীতিমালা মানা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩) শক্তিশালী মনিটরিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে
৪) প্রতি বছর সংস্থায় শিশু নির্যাতনের সম্ভাব্য ঝুঁকি যাচাই করতে হবে
৫) শিশুদের ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য বা এমন কোন তথ্য যে কোন মাধ্যমে প্রকাশ বা প্রচার করা যাবেনা যা তাদের নিরাপত্তায় ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে।

নিয়োগ ও নির্বাচন প্রক্রিয়া :-

১) বিজ্ঞাপিত পদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং শিশুদের সাথে সংশ্লিষ্ট তার মাত্রা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হবে যাতে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন সম্ভব হয়।
২) শিশু অধিকারের প্রতি প্রার্থীর সংবেদনশীলতা যাচাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট আবেদন ফরম ব্যবহার করা যেতে পারে যেখানে পূরণকৃত তথ্য, ক্রিমিনাল রেকর্ড যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে সহায়ক হবে।
৩) লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক স্বাক্ষাৎকার ও রেফারেন্স চেকের মাধ্যমে প্রার্থীর শিশু অধিকারের প্রতি সংবেদনশীলতা যাচাই করা হবে।
৪) অন্যান্য নিয়োগ যেমন, পরামর্শদাতা, স্বেচ্ছাসেবক, সেবাদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের অতীত রেকর্ড যাচাই করতে হবে।

শিশু নির্যাতন ইস্যুতে সাড়া প্রদান :-

কোন ঘটনা যা এই নীতিমালার ৩য় অধ্যায়ে বর্ণিত অপরাধের সংজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং ৪র্থ অধ্যায়ে বর্ণিত আচরণ বিধির খেলাপ হিসেবে প্রমাণিত হয় তবে তা শিশু সুরক্ষার নীতিমালার পরিপন্থি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।
১) ক্ষতিগ্রস্ত শিশু নিজে বা অভিভাবক বা অন্যদের সহায়তায় বা প্রত্যক্ষদর্শী (সংস্থার কর্মীও হতে পারে) ফোকাল পারসনকে ঘটনা সম্পর্কে মৌখিক বা লিখিতভাবে জানাবে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরম ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
২) মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ গৃহীত হওয়ার পর ফোকাল পারসন প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করবেন এবং অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হলে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত করবেন এবং কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুত তদন্ত দলগঠন এবং তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
৩) গুরুতর নির্যাতিত শিশুর ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া তার আইনী সহায়তাও নিশ্চিত করতে হবে।
৪) ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, প্রত্যক্ষদর্শী বা অভিযোগ দায়ে সহায়তাকারীর নিরপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫) এজাগ ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, তার অভিভাবক এবং পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও তারা যাতে নিরাপদ থাকে তা নিয়মিত মনিটর করা হবে।
৬) ফোকাল পারসন নির্যাতিত শিশু ও তার পরিবারকে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করবেন। তারা কি ধরনের প্রতিকার আশা করেন তা জানতে হবে এবং এজাগের বিধি বিধান অনুযায়ী তাদের প্রত্যাশিত প্রতিকার পূরণ করার চেষ্ট করতে হবে।
৭) অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত অভিযুক্তকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হবে।
৮) তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে ব্যবস্থাপনা কমিটি অভিযোগের বিষয়ে শুনানীর আয়োজন করবেন যেখানে নির্যাতিত শিশু, প্রত্যক্ষদর্শী, ফোকাল পারসন, তদন্তদল এবং অভিযুক্তের বক্তব্য গ্রহণ করা হবে। উপযুক্ত স্বাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা কমিটি অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৯) শিশু নির্যাতনের ধরণ ফৌজদারী অপরাধের তুল্য হলে রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় আদালতের সহায়তা নেয়া হবে।

তদন্ত :-

এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালার যে কোন লঙ্ঘনজনিত ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করার প্রেক্ষিতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিম্নোক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক এজাগের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে
১) শিশু সুরক্ষা লঙ্ঘনজনিত প্রতিটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত দল গঠন করা হবে। এই তদন্ত দল ৩ সদস্য বিশিষ্ট হবে এবং এর নেতৃত্বে থাকবেন ফোকাল পারসন। অন্য দুই জন সদস্য হবে সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধি।
২) মারাত্নক ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযোগে প্রাপ্তির ৬ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত শুরু করতে হবে। এর মধ্যে নির্যাতিত শিশুর চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থান ত্যাগ করতে পারবেনা। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইন শৃ্খংলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হবে।
৩) নির্যাতনের মাত্রা গুরুতর না হলে হলে অভিযোগ গ্রহণের পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
৪) তদন্তের প্রয়োজনে নির্যাতিত শিশুকে এমনভাবে জিজ্ঞাসা করা যাবেনা যাতে শিশু বিব্রত বোধ করে। যে পরিমান তথ্য পেলে নির্যাতনের বিষয়টি প্রমান করা যাবে শুধু সে পরিমাণ তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে শিশু সহজবোধ করে এবং নিজ থেকেই তথ্য প্রদানে সহায়তা করে।
৫) জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশুটিকে নিশ্চিত করুন যে তার দেয়া তথ্য তার উপকারের কাজে লাগবে এবং কিভাবে কাজে লাগবে তা ব্যখ্যা করুন। তথ্য গোপন রাখা হবে এরকম আশ্বাসের বিনিময়ে তার কাছ থেকে তথ্য নেয়া যাবেনা। শিশুটিকে আশ্বস্ত করুন যে তার দেয়া তথ্য নির্দিস্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কারো কাছে দেয়া হবেনা।
৬) তদন্ত চলাকালীন সময়ে এর কোন তথ্য কোন মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবেনা।
৭) তদন্ত বিষয়ক যে কোন কার্যক্রমে এজাগেরসকল কর্মী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান, এবং সদস্য সংগঠনগুলো পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে।
৮) তদন্তের শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে উপযুক্ত নথিপত্রসহ একটি প্রতিবেদন ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে প্রদান করতে হবে। গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন পেশ করতে হবে।

ব্যবস্থাপনা

এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। ৫ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে এজাগের পরিচালক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সদস্য সংগঠন থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। কমিটি গঠনে জেন্ডার ব্যালেন্স অনুসরণ করা হবে। শিশু সুরক্ষা নীতিমালার সামগ্রীক বাস্তবায়নের জন্য এই কমিটি কাজ করবে। এই কমিটি ফোকাল পারসন নির্ধারন করবেন এবং তার পরামর্শের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি, মনিটরিং কমিটি গঠন এবং অভিযোগের নিষ্পত্তিকল্পে শুনানী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এই কমিটির কার্যাবলী নিম্নে উল্লেখ করা হলো
ক. এই কমিটি এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালা সামগ্রীকভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে। শিশু সুরক্ষা নীতিমালা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম এই কমিটির মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। এই কমিটি তাদের কার্যক্রমের জন্য নির্বাহী বোর্ডের কাছে জবাবদিহি করবে।
খ. শিশু সুরক্ষা নীতিমালার লঙ্ঘনজনিত সকল তদন্ত ও মনিটরিং প্রতিবেদন এই কমিটি পর্যালোচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
গ. ব্যবস্থাপনা কমিটি মনিটরিং রিপোর্ট এর ভিত্তিতে নীতিমালা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বা এর প্রভাব যাচাইয়ের উদ্দেশ্য পর্যালোচনা সভায় মিলিত হবেন। জরুরী কোন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সভা আহ্বান করা যাবে।
ঘ. প্রতিবেদন, মনিটরিং, সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ সকল কার্যক্রমে ব্যবহৃত ফরম, ফরমেট, উপকরণ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে।
ঙ. ব্যবস্থাপনা কমিটি শিশু সুরক্ষা নীতিমালা সম্পর্কিত সকল আর্থিক কার্যক্রম এবং বাজেট অনুমোদন করবেন।
চ. পরিকল্পনা, কর্মকৌশল, নিয়োগ, প্রকিওরমেন্ট, অবকাঠামোর উন্নয়ন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসৃত হয়েছে কিনা তা এই কমিটি নিশ্চিত করবে।
ছ. নীতিমালার পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের স্বার্থে এই কমিটি যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

মনিটরিং

এজাগ এর শিশু সুরক্ষা নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। এ উদ্দেশ্যে এজাগের উর্ধ্বতন কমকর্তা, সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধি নিয়ে ৩ সদস্যের একটি মনিটরিং গঠন করা হবে। ফোকাল পারসন এই মনিটরিং টিমের সমন্বয় করবেন। শিশু সুরক্ষা নীতিমালা ব্যবস্থাপনা কমিটি মনিটরিং কমিটির তত্ত্বাবধান করবেন। দুইটি পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে – বিষয়ভিত্তিক মনিটরিং এবং নিয়মিত মনিটরিং। বিষয়ভিত্তিক মনিটরিং হলো কোন নতুন পরিকল্পনা, কার্যক্রম অথবা নীতিমালা গ্রহণ করা হলে তা শিশু সুরক্ষা নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। নিয়মিত মনিটরিং হলো এজাগেরশিশু সুরক্ষা নীতিমালা সঠিকভাবে ২২ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা বা সংস্থার আচরণ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কি ধরনের গুনগত পরিবর্তন সাধন করেছে কিনা তা যাচাই করা। প্রতি ছয় মাস অন্তর নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।

রিপোর্টিং

এজাগের শিশু সুরক্ষা নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন অনুধাবনে রিপোর্টিং একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হবে। শিশু সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তবায়ন বিষয়ে মনিটরিং টিম ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রদান করবেন। মনিটরিং প্রতিবেদন মাসিক সমন্বয় সভা, নির্বাহী বোর্ড সভায় এজেন্ডা হিসেবে আলোচনা করা হবে। মনিটরিং রিপোর্ট এর ভিত্তিতে নীতিমালায় কোন ধরনের পরিবর্তন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে তা দ্রুত কার্যকর এবং অবহিত করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

গোপনীয়তা

নির্যাতিত শিশু সম্পর্কিত সকল তথ্য এবং নথিপত্র সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে যতটুকু তথ্য প্রকাশের প্রয়োজন তার অধিক কোন তথ্য প্রকাশ করা যাবেনা। এছাড়া শিশুদের সম্ভাব্য নির্যাতন থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্য কোন নির্যাতনের তথ্য সীমিতআকারে শুধুমাত্র উদহারণ হিসেবে দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্যাতিত শিশুর পরিচয় প্রকাশ করা যাবেনা। গোপনীয়তা ভঙ্গ হলে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংস্থার বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংশোধন ও পরিমার্জন

শিশু সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তবায়ন বিষয়ে মনিটরিং রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে প্রতি ২ বছরে একবার শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ সভা আয়োজন করতে হবে যেখানে ফোকাল পারসন, ব্যবস্থাপনা কমিটি, নির্বাহী বোর্ড এর সদস্য এবং সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনের পর সংক্ষিপ্ত সময়ে এজাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে সংশোধিত নীতিমালা প্রেরণ ও কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।